বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আল্লাহ্ তায়ালার সর্ব শেষ গ্রন্থ কোরআনে কারীমের হীরক খন্ড, যা কারো দিলে একবার বসে গেলে সেখানেই ঘর বানিয়ে নেয়। বিসমিল্লার আমল যার দিলে থাকবে তাকে যে সম্মান, শান্তি, বরকত ও মহত্ব দান করা হয় অন্য কোনো আমলের দ্বারা তা সম্ভব নয়। বিসমিল্লার 'বা' এর নুকতার বরকতে আল্লাহ্ তায়ালার যে রহমতের ঝর্না ধারা প্রবাহিত হয়, সমস্ত মাখলুক সেই রহমত থেকে উপকৃত হতে থাকে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) জনাবে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) থেকে এরশাদ ফরমান - যে ব্যক্তি বিসমিল্লাহির রাহমানি রাহীম পাঠ করবে আল্লাহ্ তায়ালা তাকে প্রত্যেক হরফের পরিবর্তে চার হাজার নেকি দান করবেন, চার হাজার গুনাহ মাফ করে দিবেন, এবং চার হাজার সস্মান বৃদ্ধি করে দিবেন।
(নুজহাতুল মাজালিশ)
আরো পড়ুন: ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে কওমি মাদরাসা।
বিসমিল্লার মধ্যে ১৯টি হরফ আছে, এই ১৯টি হরফ একবার পাঠ করবার কারনে ৭৬ হাজার নেকি দান করা হবে, ৭৬ হাজার গুনাহ্ মাফ করা হবে, এবং ৭৬ হাজার সম্মান বৃদ্ধি করা হবে।
সুবহানাল্লাহ্ আল্লাহ্ রব্বে কারীম কত বড় দেনেওয়ালা তা মানুষের কল্পনাতীত অতুলনীয়।
যখন বিসমিল্লাহ্ শরীফ নাযিল হয় তখন শয়তান লজ্জায় মাথায় মাটি মাখে এবং তাকে পাথর নিক্ষেপ করে বেইজ্জত করা হয়। অতঃপর আল্লাহ্ রাব্বুলআলামিন স্বীয় ইজ্জত ও বড়ত্বের কসম করে বলেন - যে কাজের মধ্যেই আমার বান্দা আমার এই বরকতপুর্ন নাম নিবে সে কাজের মধ্যে আমি বিপুল বরকত দান করবো। কোন রোগী যদি পাঠ করে তবে আমি পূর্ন আরোগ্য দান করবো। অবশেষে পাঠ কারীকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো।
পবিত্র কুরআন শরীফের ১১৪টি সূরার মধ্যে সূরা তওবা ব্যতিরেকে বাকি ১১৩টি সূরা শুরু করা হয়েছে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” দিয়ে।
এছাড়া হাদীস থেকে জানা যায়, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) প্রতিটি কাজ শুরু করার আগে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বলে শুরু করতেন।
এ জন্য আল্লাহর নাম অর্থাৎ বিসমিল্লাহ বলেই সব কাজ শুরু করা উচিত। আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া আমাদের কিছুই করার ক্ষমতা নেই। তার অনুগ্রহ-অনুকম্পা পেয়েই আমরা বেঁচে আছি। আর এই অনুগ্রহ-অনুকম্পা লাভের জন্য তিনি দিয়েছেন একটি বাণী, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’।
তাফসির-ই-ইবনে আবি হাতিমে রয়েছে, ‘উসমান বিন আফফান (রা:) রাসূলুল্লাহ (সা:) কে ‘বিসমিল্লাহ’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তিনি উত্তরে বলেছিলেন, এতো আল্লাহ তায়ালার নাম।
আল্লাহর বড় নাম এবং এই বিসমিল্লাহর মধ্যে এতদূর নৈকট্য রয়েছে যেমন রয়েছে চুল কালো অংশ ও সাদা অংশের মধ্যে। ইবনে মরদুওয়াইর তাফসিরে রয়েছে, ‘রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, আমার ওপর এমন একটি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে যার মতো আয়াত হজরত সুলাইমান ছাড়া অন্য কোনো নবীর ওপর অবতীর্ণ হয়নি। আয়াতটি হলো, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’।
হজরত জাবির (রা:) বর্ণনা করেন, যখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন পূর্ব দিকে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়, বায়ুমণ্ডল স্তব্ধ হয়ে যায়, তরঙ্গ বিক্ষুব্ধ সমুদ্র প্রশান্ত হয়ে যায়, জন্তুগুলো কান নাড়িয়ে শয়তানকে বিতাড়ন করে এবং বিশ্বপ্রভু স্বীয় সম্মান ও মর্যাদার কসম করে বলেন, ‘যে জিনিসের ওপর আমার এ নাম নেয়া যাবে তাতে অবশ্যই বরকত হবে। (তাফসির ইবনে কাসির)
বিসমিল্লাহ দিয়েই সব কাজ শুরু করতে হয়। কাজ ও কথার শুরুতেই বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব। হাদিসে এসেছে, যে কাজ বিসমিল্লাহ দ্বারা শুরু করা না হয় তা কল্যাণহীন ও বরকতশূন্য হয়। বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু করলে আল্লাহ তাকে করুণা করেন, হেফাজতে রাখেন ও কাজে বরকত দান করেন। এ বাক্যের মাধ্যমে কর্ম শুরু করলে শয়তানের অসওয়াসা থেকে মুক্ত থাকা যায়।
যে ব্যক্তি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ৬শ’ বার লিপিবদ্ধ করে সঙ্গে রাখবে, আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাদের ওপর সে ব্যক্তির প্রভাব সুপ্রতিষ্ঠিত করে দেবেন, কেউ তার ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম হবে না।
হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, `আদম সন্তান যখন কাপড় খোলে, তখন তার সতর ও নিজদের চোখের মধ্যবর্তী পর্দা হচ্ছে `বিসমিল্লাহির-রাহমানির রাহিম`। তাহলে আল্লাহ ইচ্ছা করলে বিসমিল্লাহর আমলকারীদের জন্য জাহান্নামকেও আড়াল করে দিতে পারেন।
যে ব্যক্তি কোনো নেক মকসুদ হাসিলের জন্য বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ১২ হাজার বার এভাবে পাঠ করে যে, প্রত্যেক ১ হাজার বার পাঠ করার পর দু’রাকাআত নামাজ আদায় করে দোয়া করবে। এভাবে ১২ হাজার বার পাঠ করে দোয়া করলে, আল্লাহ তাআলার রহমতে ঐ ব্যক্তির মকসুদ পূর্ণ হয়।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে এরশাদ করেন, ‘হে আবু হুরায়রা! তুমি যখন অজু করবে, বিসমিল্লাহ বলবে। তাহলে ফেরেশতাগণ তোমার অজু শেষ না হওয়া পর্যন্ত তোমার জন্য পুণ্য লিখতে থাকবে। তুমি যখন স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করবে, তখন বিসমিল্লাহ বলবে। তাহলে যতক্ষণ না তুমি গোসল শেষ করবে, ততক্ষণ ফেরেশতাগণ তোমার জন্য পুণ্য লিখতে থাকবে। সেই সহবাসে যদি তোমার কোনো সন্তান লাভ হয়, তবে সেই সন্তানের নিঃশ্বাস এবং তার যদি বংশধারা চালু থাকে, তবে যতকাল তা চালু থাকবে, ততকাল পর্যন্ত তাদের সবার নিঃশ্বাসের সংখ্যা পরিমাণ পুণ্য তোমার আমলনামায় লেখা হতে থাকবে। হে আবু হুরায়রা! তুমি যখন পশুর পিঠে চড়বে, তখন বিসমিল্লাহ বলবে। তাহলে তার প্রতি কদমে তোমার জন্য পুণ্য লেখা হবে। আর যখন নৌকায় চড়বে, তখনো বিসমিল্লাহ বলবে। তাহলে যতক্ষণ না তুমি তা থেকে নামবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার জন্য পুণ্য লেখা হতে থাকবে।`
যে ব্যক্তি ১০০ বার বিসমিল্লাহির রাহমানির লিখে ক্ষেতে-খামারের দাফন করে রাখে, আল্লাহ তাআলা সব ধরনের বালা-মুসিবত থেকে ফসলের হেফাজত করেন। ফসলের বরকত বৃদ্ধি করে দেন। এছাড়াও জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির গলায় অথবা বাহুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লিখে দিলে আল্লাহর রহমতে জ্বর চলে যায়।
বিসমিল্লাহ এর বরকত সর্ম্পকে একটি ঘটনা শুনে নেওয়া যাক।
রোম সম্রাট একবার খলিফাতুল মুসলিমিন হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর দরবারে তার মাথা ব্যথার কথা জানিয়ে প্রতিকারের জন্য আবেদন করেছিল। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে একটি টুপি প্রেরণ করেছিলেন। যতক্ষণ এ টুপি মাথায় থাকতো ততক্ষণ মাথা ব্যথা হতো না। কিন্তু যখনই মাথা থেকে টুপি সরানো হতো, সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা শুরু হতো। এ ঘটনায় সবাই বিস্মিত হয়। অবশেষে টুপি খুলে এর কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গেল যে তাতে শুধু ‘বিসমিল্লাহ’ লিপিবদ্ধ রয়েছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি `বিসমিল্লাহ` লেখা আছে এমন কোনো কাগজের টুকরা আল্লাহ তায়ালার তাজিমের উদ্দেশ্যে হেফাজত করেন, আল্লাহর কাছে তার নাম সিদ্দিকদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয় এবং তার পিতামাতার শাস্তি লাঘব করা হয়, যদিও তারা মুশরিক হয়ে থাকে।’
পরিশেষে...
আল্লাহ তাআলার দরবারে ফরিয়াদ আল্লাহর শুকরিয়া আদায়, আল্লাহর প্রশংসা, আল্লাহর নাম নেয়া ছাড়া আমাদের কোনো কাজ যেন শুরু না হয়। সব সময় সব কাজ আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করব। উপরোক্ত বরকত ও কল্যাণ লাভে ধন্য হব। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন। আমিন।
ইসলামিক জ্ঞান সঙ্গে থাকুন। গুরুত্বপূর্ণ দুআ ও আমল শিখুন। সুন্দর সুন্দর ইসলামি আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
No comments:
Post a Comment